পরিতোষ সেন

পরিতোষ সেন (জন্ম অক্টোবর ১৮, ১৯১৮) একজন ভারতীয় চিত্রশিল্পী। তিনি বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আধুনিকতাবাদী কলকাতা গ্রুপ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ফ্রান্সের নামকরা শিল্পকলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে তিনি অধ্যয়ন করেন, যেমন আকাদেমি আঁদ্রে লোত, আকাদেমি দ্য লা গ্রঁদ শমিয়ের, একোল দে বোজাখ এবং প্যারিসের একোল দু লুভ্র্‌। ভারতে ফেরার পর তিনি প্রথমে বিহারে শিক্ষকতা করেন, পরবর্তীতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরিতোষ সেন যাদবপুরে অবস্থিত মুদ্রণ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য রিজিয়োনাল ইন্সটিটিউট অফ প্রিন্টিং টেকনোলজি’তে অনেক বছর ডিজাইন অ্যান্ড লে-আউটের শিক্ষক ছিলেন। আরআইপিটি কলেজের তিনতলার স্টুডিয়ো তথা শ্রেণিকক্ষে একবার এক ছাত্র প্রশ্ন করে : ‘স্যার আপনার ছেলে কী করে?’ তিনি দু-সেকেন্ড নীরব থেকে বললেন, ‘আমার কোনো ছেলেমেয়ে নেই, তোমরা-ই আমার ছেলেমেয়ে।’ তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করতেন। ক্লাস চলাকালীন প্রত্যেকের কাছে গিয়ে কাজ দেখে ঠিক করে দিতেন। আবার কাজের ফাঁকে আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পী ভ্যান গঘের জীবনের গল্প বলতেন। ১৯৭৭-৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আমেরিকায় অ্যাসোসিয়েট লেকচারার হয়ে চলে যান। তার স্ত্রী-ও ওই দেশে চাকরি নিয়েছিলেন, দুজনে এক জায়গায় থাকবেন এই জন্যে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ডিজাইনিং ও টাইপফেস শেখার জন্যে ফরাসি ফেলোশিপ লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রসটাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের রকাফেলার ফেলোশিপ জিতেন। তিনি ভারত ও বহির্বিশ্বে প্রচুর প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে: মাদার টেরেসা সরণির (পার্ক স্ট্রিট) কাছে ব্রিটিশ পেইন্টসের (বার্জার পেইন্টস) অডিটোরিয়ামে বিগত শতকের আটের দশকে পরিতোষবাবুর একটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীর বিষয় ছিল : ‘অন্তঃসত্ত্বাকালীন মায়ের শারীরিক অবস্থার বিবর্তন’। কী অভিনব দক্ষতায় শিল্পী অন্তঃসত্ত্বার সময়কালীন মায়ের প্রচ্ছন্ন যন্ত্রণাকাতরতার মধ্যেও বেড়াল নিয়ে খেলা করা এবং অব্যক্ত যন্ত্রণাকে হাসিতে রূপান্তরিত করার প্রয়াস ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, না-দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। অবশ্য বিরূপ মন্তব্যও যে হয়নি তা কিন্তু নয়। আবার, ওই শিল্প প্রদর্শনীর পঁচিশটি ছবিই ছিল নগ্ন। আসলে রতনে রতন চেনে! পরিতোষবাবুর দেশি-বিদেশি গুণগ্রাহীর মধ্যে তার বন্ধু তথা বিশ্ববন্দিত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় ওই শিল্প প্রদর্শনীর একটি ছবি তৎকালীন মূল্যে এক হাজার টাকায় কিনেছিলেন। সেটা দেখে এক বিদেশিনীও ছ-শো টাকায় একটি ছবি কেনেন। পরিতোষ সেন ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ভক্ত ছিলেন। কলকাতায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে সেতারের অনুষ্ঠানে রবিশঙ্কর, ইমরাত খান, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের সেতারবাদন তার পছন্দের বিষয় ছিল।

You've just added this product to the cart: